
মোঃ লিটন উজ্জামান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ;
আজ রোজ: শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা এখন কুষ্টিয়ার জনপদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শনিবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমলা ও হালসা বাজারে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, কুষ্টিয়া–২ (মিরপুর–ভেড়ামারা) আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম নেতৃত্ব দেন এই কর্মসূচিতে।
“নিরপেক্ষ নির্বাচনই জনগণের মুক্তির পথ”
ড. সাইফুল ইসলামের বক্তব্যে বারবার ফিরে আসে “নিরপেক্ষতা” ও “জনগণের ভোটাধিকার” বিষয়টি। তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যেখানে জনগণ ভয় ছাড়াই ভোট দিতে পারবে। জনগণই ঠিক করবে কে ক্ষমতায় থাকবে—এটাই গণতন্ত্রের মূলে।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার এই বক্তব্য মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী প্রস্তুতি ও জনগণের আস্থার পুনর্গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।
জনগণের হাতে পৌঁছালো তারেক রহমানের ৩১ দফা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত “রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা” দলের নতুন রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা হিসেবে মাঠে নেমেছে। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য— গণতন্ত্র, ন্যায় ও জনগণের মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। ড. সাইফুল ইসলাম বলেন,“বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা কোনো দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। এটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকনির্দেশনা। তারেক রহমান এই রূপরেখার মাধ্যমে জনগণের মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ দিয়েছেন। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।’’ তিনি আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে জনগণের কাছে ফিরে যাওয়ার, তাদের হাতে আশার বার্তা তুলে দেওয়ার।”
আমলা ও হালসা বাজারে কর্মসূচি: জনতার সাড়া
আমলা বাজারের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হালসার কৃষিপণ্য মার্কেট পর্যন্ত— সর্বত্র দেখা যায় লিফলেট হাতে জনগণ ও কর্মীদের উৎসাহ। বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, এই লিফলেট প্রচারকে ঘিরে জনমনে নতুন আলোচনার জন্ম হয়েছে। বাজার, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণস্থানে বিএনপির কর্মীরা জনগণের হাতে ৩১ দফা কর্মসূচি তুলে দেন। ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা জনগণের চোখে চোখ রেখে কথা বলছি। এই লিফলেটই আমাদের প্রতিশ্রুতি— এটা দেশের প্রতিটি মানুষের কল্যাণের কথা বলে।”
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা
বক্তব্যে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে স্মরণ করে বলেন, “এই মাটির মানুষ আজও শহীদ জিয়ার আদর্শ নিয়ে বেঁচে আছে। তিনি শেখালেন— বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারে, স্বনির্ভর হতে পারে, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারে।”ড. সাইফুল ইসলামের মতে, জিয়াউর রহমানের চিন্তা–চেতনার মধ্য দিয়েই বিএনপি আজ জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, “প্রযুক্তির যুগে মানুষ আরও সচেতন হয়েছে, তারা জানে কে তাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আর কে তা ফিরিয়ে দিতে চায়।”
কৃষি, শিল্প ও জ্বালানি উন্নয়ন: ড. সাইফুলের দৃষ্টিভঙ্গি
ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এই মাটিতে উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের জমি উর্বর, কৃষকরা পরিশ্রমী— তারা দেশ গড়ছে নীরবে।” তিনি আরও বলেন, “একদিকে বিদামারা ও রূপপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, অন্যদিকে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন— এই ভারসাম্যই টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি।” তার বক্তব্য অনুযায়ী, স্থানীয় শিল্পে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, তবে কৃষিজমি রক্ষা করে। এতে যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তেমনি পরিবেশও সুরক্ষিত থাকছে। তিনি যোগ করেন, “আমরা এমন উন্নয়ন চাই, যা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে—প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন হবে নিচ থেকে।”
যুবসমাজ ও কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার
ড. সাইফুল ইসলামের ভাষায়—“আজ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ আমাদের তরুণরা। তারা শিক্ষিত, কিন্তু বেকার। তাই কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ গড়াই আমাদের অঙ্গীকার।” তিনি বলেন, শিক্ষা যেন শুধুমাত্র ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং তা উৎপাদনশীল কাজে রূপ নেয়—এ জন্য বিএনপি পরিকল্পনা করছে একটি দক্ষতা-ভিত্তিক কর্মনীতি।
মাঠপর্যায়ে দলের ঐক্য ও উপস্থিতি
লিফলেট বিতরণে অংশ নেন—ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও মোকারমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মঞ্জুর আলম দুলাল, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শওকত আলী বিশ্বাস, ৩নং ওয়ার্ড সভাপতি রফিকুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুল কাদের, ৬নং ওয়ার্ড সভাপতি লাল মিয়া, এবং ১নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমিন প্রমুখ। তারা বলেন, “ড. সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই লিফলেট কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে নতুন গতি এনেছে। জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগই বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি।”
মিরপুর-ভেড়ামারা: উন্নয়ন, শিক্ষা ও সম্ভাবনার কেন্দ্র
মিডিয়ার বক্তব্যে ড. সাইফুল ইসলাম মিরপুর ও ভেড়ামারা অঞ্চলের মানবসম্পদ সম্ভাবনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এই এলাকার মানুষ পরিশ্রমী ও সৃষ্টিশীল। অনেক শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী এখান থেকে উঠে এসেছে। এই জনশক্তিই বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব দেবে।”তিনি আরও বলেন, “আমাদের মাটিতে যে উর্বরতা, সেইরকম উর্বরতা আছে মানুষের মেধায়ও— সেটিই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
জনগণের প্রতিক্রিয়া: আশা ও আস্থা
লিফলেট হাতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় বলেন, “এই ৩১ দফায় এমন অনেক বিষয় আছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত— কর্মসংস্থান, কৃষি, শিক্ষার মান, এবং নিরপেক্ষ প্রশাসন।” একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এবারের রাজনৈতিক কর্মসূচি শুধু কথা নয়, বাস্তব পরিকল্পনার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।”