
মোঃ লিটন উজ্জামান (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি :-
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কুষ্টিয়া–২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম ২৪ অক্টোবরের এক বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামাজিক সম্প্রীতি, নারীসম্মান, নির্বাচনী সংস্কার ও আধুনিক রাজনৈতিক যোগাযোগ—এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন। ইলেকট্রনিক ও মুদ্রণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “রাজনীতির আসল শক্তি হলো মানুষের হাসি, ভালোবাসা ও সম্মান—এ সংযোগ হারালে রাজনীতি অর্থহীন হয়ে পড়ে।”
ভাষণের শুরুতেই তিনি ফ্যাসিস্ট শেখহাসিনা সরকারের গত ১৭ বছরকে “রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি ও একনায়কতন্ত্রের” সময় হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “যে পারস্পরিক সৌজন্যবোধ আমাদের সমাজে ছিল, তা ক্ষীণ হয়েছে; ভিন্নমত মানেই শত্রুতা—এ মনোভঙ্গি দেশের সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করেছে।” তিনি সতর্ক করেন, ক্ষুদ্র কারণেও রাষ্ট্রের স্থিতি ও অর্থনৈতিক কাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে—তাই রাজনৈতিক আচরণে শিষ্টাচার ও সহনশীলতা ফিরিয়ে আনাই সময়ের দাবি।
মানবিক মর্যাদা প্রসঙ্গে তিনি কোরআন–সুন্নাহর মূল্যবোধ ও সাম্যের কথা তুলে ধরে বলেন, “সব মানুষের রক্ত লাল—ভিন্ন পরিচয় সত্ত্বেও আমরা আগে মানুষ, পরে দল–মত।” নারীসম্মানের প্রসঙ্গে তাঁর আবেগঘন উচ্চারণ—“আমার মা ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ করে আমাকে পৃথিবীতে এনেছেন; নারীকে অসম্মান মানেই মানবতাকে আঘাত। রাজনীতি–সমাজ–পরিবার—সবখানেই নারীর মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, “বিভাজন নয়—সম্পর্ক, বন্ধন ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাই শান্তির চাবিকাঠি।” তিনি জানান, জনগণের রায় পেলে বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শালীনতা, অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চায়। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে যোগ করেন, “আমরা বন্দুকের মুখে নয়, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে চাই।”
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর আহ্বান—“অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন; ত্যাগ, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিই প্রকৃত রাজনীতির ভিত্তি।” তিনি মনে করেন, ভেতর থেকে সৎ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বাইরে প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান—এই দুই পথেই গণতন্ত্র শক্ত হয়।
আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে “গণতন্ত্রের পুনর্জন্মের সুযোগ” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “প্রচলিত ভোটপদ্ধতিতে যে ত্রুটি–ঝুঁকি আছে, তা কাটাতে স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া দরকার।” আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে তিনি স্মরণ করান, ১৮৯২ সালে বেলজিয়ামে আধুনিক রাজনৈতিক পিআর (Public Relations)–এর সূচনা—ইউরোপ–আমেরিকায় যার বিবর্তন ঘটেছে—এ দেশের রাজনৈতিক যোগাযোগও তথ্যভিত্তিক, নৈতিক ও আধুনিক হওয়া উচিত। স্থানীয় বাস্তবতা (ভূমি–জমি, পেশাভিত্তিক স্বার্থ, সাংস্কৃতিক সংবেদন) বুঝে প্রার্থী বাছাই ও ভোটার–সংযোগ চালানো জরুরি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বক্তব্য চলাকালে উপস্থিত জনতার প্রতিক্রিয়া ছিল উচ্ছ্বসিত—অনেকে তাঁকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরেন, স্লোগান ওঠে—“আমাদের নেতা সাইফুল ভাই—ধানের শীষের প্রার্থী চাই!” তরুণরা নিজেদের খরচে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে সমর্থন জানায়। ড. সাইফুল ইসলামের ভাষায়, “জনগণের ভালোবাসাই আমার রাজনীতির অক্সিজেন; এই আস্থা আমাকে দায়বদ্ধ করে।”
সম্মান–সহাবস্থান–শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র—এই তিন অক্ষরেই ২৪ অক্টোবরের ভাষণের সারবত্তা। প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম স্পষ্ট করে দিয়েছেন—সামাজিক সম্প্রীতি, নারীসম্মান, আইনের শাসন, নির্বাচনী স্বচ্ছতা ও আধুনিক রাজনৈতিক যোগাযোগ—এই পাঁচ ভিত্তিতেই তিনি কুষ্টিয়া–২–এর ভবিষ্যৎ রাজনীতি গড়তে চান। তাঁর শেষ আহ্বান—“ভোটের রাজনীতিকে বিদ্বেষমুক্ত করুন; গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনুন সম্মানের রাজনীতিতে।”