তরিকুল ইসলাম, রংপুর
নিজেদের ৩৭ দফা দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা টানা চতুর্থ দিনের মতো অচল করে রেখেছিল রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজ। বুধবার (২৫ জুন) আন্দোলনকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির ডাক দিলেও প্রশাসনের ফলপ্রসূ হস্তক্ষেপে এবং আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ শাটডাউন কর্মসূচি কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই নমনীয়তা একটি আশার আলো জাগিয়েছে যে, অচলাবস্থা দ্রুতই নিরসন হতে পারে।
সকাল থেকেই কলেজের লালবাগ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যথারীতি কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের কণ্ঠে ছিল সুনির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া পূরণের দৃঢ় প্রত্যয়।
বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মজিদ আলী, সেনাবাহিনীর ৭২ ব্রিগেড কমান্ডার হুমায়ুন কাইয়ুম এবং কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে।
আশ্চর্যজনকভাবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের এই সুশৃঙ্খল আন্দোলনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৫ জন প্রতিনিধি এবং অধ্যক্ষ মহোদয়কে ঢাকায় গিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করার একটি প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করলেও, এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনায় বসেছে। আলোচনার পর তারা দ্রুতই তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবে বলে জানিয়েছে। তবে, সবচেয়ে স্বস্তির খবর হলো, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হতে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এইচএসসি পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ শাটডাউন কর্মসূচি কিছুটা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন, কারণ তারা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারবেন।
শিক্ষার্থীদের ৩৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন, দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যাগুলির দ্রুত সমাধান, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের প্রতি হয়রানি বন্ধ, ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি স্হাপন এবং অন্যান্য প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। এই দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলন কবে শেষ হবে এবং শিক্ষার্থীদের এই গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো কতটুকু পূরণ হবে, তা জানতে এখন সকলের দৃষ্টি সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে।
এই আলোচনার প্রস্তাব কি একটি স্থায়ী সমাধানের পথ খুলে দেবে, নাকি আন্দোলন নতুন মোড় নেবে, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।